কিডনি রোগ কেনো হয়?এ থেকে বাচার উপায় কি
আচ্ছালামু আলাইকুম NEW NCP এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে কিডনি রোগ কেনো হয়?এ থেকে বাচার উপায় কি নিয়ে আলোচনা করব।
কিডনি রোগ কেনো হয়?এ থেকে বাচার উপায় কি?
কিডনি রোগ কী?
কিডনি আসলে শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। প্রতিটি মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে। এটা আমি না বললেও আপনারা জানেন। কিডনি আসলে শরীরে যে রক্ত থাকে, সেটাকে ফিল্টারিং করে মূত্র তৈরি করে। এ ছাড়া আমাদের শরীরে যে, অতিরিক্ত পানি এবং বর্জ্য পদার্থ থাকে, সেটি বের করে দেয় কিডনি৷ তাছাড়া আমরা যে খাবার খাই, সে খাবার থেকে লবণ এবং খনিজ পদার্থ রক্তে মিশে যেতে সহায়তা করে। এছাড়াও কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হাড়ের গঠন মজবুত রাখে এবং নতুন রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
কিডনি রোগের সাধারণ লক্ষন কি?
বাংলাদেশে যে, কিডনি ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা আছে, তাদের এক জরিপ বলছে যে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় 2,00,00,000 মানুষ কোনো না কোনো ধরনের কিডনি রোগে ভুগে থাকেন। আর প্রতি বছর অন্তত 40,000 কিডনি নষ্ট হয়। কিডনি ফেলিওর, এটার কথা আমরা সবাই শুনেছি। তবে তার আরেকটি নাম আছে, সেটি হচ্ছে ক্রনিক কিডনি ডিজিস। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হচ্ছে, কিডনির এমন একটি অবস্থা, যখন কিডনি দীর্ঘ মেয়াদে ভাল ভাবে কাজ করতে পারে না। সব বয়সী মানুষের মধ্যে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ দেখা যায়। তবে যারা একটু বয়স্ক তাদের মধ্যে এই আশঙ্কা একটু বেশি থাকে। ক্লান্তি বোধ করা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পায়ের গোড়ালি বা পা হাত ফুলে যাওয়া, অসুস্থতা বোধ করা এবং সবশেষ প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়া এ সব উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যারা মূত্রাশয়ের সংক্রমণে ভোগেন তাঁদের মধ্যে কিডনিতে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। তবে তার মানে এই নয় যে, আপনি যদি মূত্রাশয়ের সংক্রমণে ভোগেন, তাহলে আপনার অবশ্যই কিডনিতে সংক্রমণ হবে। এটি তখনই হয়, যখন ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয় থেকে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অর্থাৎ যদি একবার কিডনিতে ব্যকটেরিয়া পৌঁছে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে কিডনিতে সংক্রমণ হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। জ্বর, জ্বর, ভাব বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা অসুস্থতা বোধ করা শরীরের পেছনের দিকে ব্যাথা করা, প্রস্রাব কমে যাওয়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা দুর্গন্ধ হওয়া এ সব উপসর্গ যদি দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া অন্য যে কারণ গুলোতে কিডনির দীর্ঘ মেয়াদি অসুখ হয়। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, এগুলো কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি কিডনি রোগের লক্ষন হিসেবে ধরা হয়। সুতরাং এধরণের লক্ষন আপনারা যখনই দেখবেন, সাথে সাথে একজন কিডনি স্পেশালিষ্ট এর সাথে যোগাযোগ করবেন।
কিডনি রোগের কারণ কি?
কিডনির অসুস্থতা অবশ্য দ্রুত গতিতে হতে পারে। যেটা,অস্থায়ী বা তাৎক্ষণিক সেটাকে আমরা বলি, অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা যেটাকে ভয় পাই, সেটা হল সি.কে.ডি বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হয় হঠাৎ করেই। ধরেন আপনি ভালই ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করে আপনার রক্তের চাপ কমে গেল। রক্তপাত হয়ে, ডায়রিয়া হয়ে, বমি হতে পারে। অথবা আপনার দেহের হিমোগ্লোবিন কমতে কমতে এমন হল যে, রক্তের চাপ কমে গেল। এ রকম হলেও হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হয়, ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে। আরেকটা কারণ হল স্টার ফ্রুট বা কামরাঙ্গা। সারাদিন ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত একজন মানুষ যখন কয়েক টুকরা এই কামরাঙ্গার ফল খেয়ে ফেলে, তখন তাঁর কিডনি নষ্ট হতে পারে। এটাকে আমরা বলি অস্থায়ী বিকলতা বা তাৎক্ষণিক কিডনি বিকলতা।
এটাকে দ্রুত সুস্থ করে ফেলা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনি একজন নেফ্রোলজিস্ট ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন। নেফ্রোলজিস্টের কাছে গেলেই, আপনার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা করবে। এমন হতে পারে যে, ১,২,৩ ডায়ালিসিস নিয়ে আপনি পুরো সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু যদি এটা স্থায়ী কিডনি বিকলতা বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়, তাহলে সুস্থ হতে খুব সমস্যা আছে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না নেন তাহলে হয়তো সুস্থ হতে পারবেন না। এবং ধীরে ধীরে সেটা বাড়তে থাকবে। এটাকে আমরা বলি প্রোগ্রেসিভ। এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে এবং জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আপনাকে পৌঁছে দেবে। তো কাজেই দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। যে কারণে আপনার কিডনির স্থায়ী রোগগুলি হতে পারে।
যেমন,
(১) অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। আপনার হাই ব্লাড প্রেশার আছে, আপনি সেটা অবহেলা করছেন। চিকিৎসা নিয়মিত নিচ্ছেন না। আপনার ব্লাড প্রেসার বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় আছে দীর্ঘদিন ধরে, যার ফলে কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।
(২) আপনার ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, তাহলেও কিডনি নিয়ন্ত্রণ হারাবে, কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে।
(৩) আপনার যদি মারাত্মক রকমের শারীরিক মেদ বা ওজন বৃদ্ধি হয়ে যায়, তাহলে ও কিন্তু কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
(৪) দীর্ঘদিন যাবত ব্যথানাশক ওষুধ যারা খেয়ে থাকে, তাদের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
(৫) ফ্যামিলি হিস্ট্রি যদি থাকে যে, আপনার পরিবারের বাবা, মা, দাদা, এদের যদি কিডনি ডিসিস থাকে, তাহলে আপনার ও কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
(৬) ধূমপান করলেও কিডনি নষ্ট হতে পারে। এগুলোকে বলা হয় রিস্ক ফেক্টর বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ।
কিডনি রোগ থেকে বাচার উপায় কি?
আপনি কি কিডনিকে ভাল রাখতে চান? তাহলে জীবন যাত্রায় পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে আসুন।
(১) বেশি বেশি তরল খেতে হবে, বেশি বেশি তরল খেলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করার সুযোগ পায়। প্রস্রাব এর রঙ যদি গাঢ় হয়ে যায় বা লাল হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে যে শরীরের তরলের পরিমাণ কমে গেছে।
(২) স্বাস্থ্যকর খাবার খান। পরিমিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার শরীরে সব ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের জোগান দেয়। অতিরিক্ত লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
(৩) নিয়মিত পরীক্ষা করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত রক্তচাপ, কিডনি এবং হৃদ্ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
(৪) ধূমপান পরিহার করুন এবং আপনি যদি অ্যালকোহল নিয়ে থাকেন তাহলে অ্যালকোহলও পরিত্যাগ করতে হবে অথবা এর মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে।
(৫) কিডনিকে ভাল রাখতে স্লিম থাকুন। শরীরের অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। আর উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাবার পরিমিত মাত্রায় খেয়ে এবং শরীরচর্চা করে শরীরের ওজন কম রাখুন। স্লিম থাকুন কিডনিকেও ভাল রাখুন আপনিও ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। কিডনি রোগ কেনো হয়?এ থেকে বাচার উপায় কি এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url